হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাসউদ অ’লী বলেন— আল্লাহ তাঁর মুখলেস বান্দাদের ওপর বরকত বর্ষণ করেন, আর সে বরকতের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছে যাহরা (সা.আ.)–এর পবিত্র সত্তায়।
কুরআনের আলোকে “বরকত”
তিনি বলেন, কুরআনে কিছু সময়, ঘটনা ও স্থানের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো লাইলাতুল কদর, যার সম্পর্কে বলা হয়েছে— “ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিন মুবারাকা।” রাতটি বাহ্যিকভাবে অন্যান্য রাতের মতো হলেও এর গুণগত মূল্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
বরকত—মানে এমন গুণ, যার প্রভাব বিশাল ও স্থায়ী।
তিনি জানান, সাইয়্যেদ ইবনে তাওসের মতো আলেমরা প্রতি শবে কদরের পরদিন থেকেই পরবর্তী বছরের শবে কদরের প্রস্তুতি নিতেন— যা এ রাতের মর্যাদা উপলব্ধির গভীরতা নির্দেশ করে।
কুরআন— বরকতের অফুরন্ত উৎস
তিনি বলেন—
• কুরআনের দিকে তাকানো ইবাদত,
• তিলাওয়াত শোনা ইবাদত,
• এবং কুরআনের প্রতি স্নেহময় দৃষ্টি—চোখের গুনাহ মুছে দেয়।
• কুরআন দুনিয়ায় পথপ্রদর্শন করে এবং আখিরাতে শাফাআতের দায়িত্ব পালন করবে।
বরকতের নিদর্শন: শেখ আব্বাস কুম্মীর আন্তরিকতা
তিনি বলেন, বরকত শুধু সম্পদ বা সময়ে নয়— জ্ঞান ও আমলেও প্রকাশ পায়। এর উদাহরণ শেখ আব্বাস কুম্মী— যিনি গভীর আন্তরিকতায় মাফাতিহুল জিনান রচনা করেন। তিনি বইয়ের প্রতিটি আমল নিজে পালন না করা পর্যন্ত বইটি মুদ্রণের অনুমতি দেননি।
এক বছর পর নিশ্চিত হলে বইটি ছাপানো হয় এবং তিনি সেটি হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)–এর উদ্দেশে হাদিয়া করেন।
আজ প্রায় ৯০ বছর পরও মাফাতিহুল জিনান প্রতিটি শিয়া পরিবারে কুরআনের পাশে স্থান পেয়েছে— এটাই বরকতের প্রকৃত উদাহরণ।
বরকতময় জীবন— সময় সীমিত হলেও প্রভাব অসীম
তিনি বলেন, বরকতপূর্ণ জীবন মানে সময় অল্প হলেও প্রভাব অমর হওয়া। যেমন—শেখ সাদুক, যিনি মাত্র ৭০ বছরে তিন শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর “মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহ” শিয়া ফিকহের অন্যতম প্রধান উৎস।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)— বরকতের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন
তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর জীবন মাত্র ১৮ বা ১৯ বছর হলেও তাঁর প্রভাব ইতিহাসব্যাপী অব্যাহত।
সূরা কাউসারে “কাউসার”—অশেষ কল্যাণ— এর বাস্তব প্রতিফলন হলেন হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)।
মুশরিকরা যখন নবীজিকে ‘আবতার’ বলেছিল, আল্লাহ ফাতিমা (সা.আ.)–এর জন্মের মাধ্যমে নবীর বংশধারাকে এমনভাবে স্থাপন করেন, যা আজও সমুজ্জ্বল।
নবুওয়ত, ইমামত ও কুরআনের রক্ষায় হযরত ফাতিমা (সা.আ.)
ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর ইন্তেকালের পর মুনাফিকরা ইমামতকে সরিয়ে দিয়ে কুরআন ও আহলে বাইতের হেদায়াতকে দুর্বল করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, যখন আক্রমণকারীরা ইমাম আলী (আ.)–এর ঘরে আসে— হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) স্বয়ং দরজায় দাঁড়িয়ে বলেন, “আলীর কাছে যেতে হলে আমার দেহের ওপর দিয়ে যেতে হবে।”
এই একক ত্যাগই কুরআন, নবুওয়ত ও ইমামতকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“ফাতিমার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাঁর ক্রোধ আল্লাহর ক্রোধ।”
বিশ্বজুড়ে সাদাত (সাইয়্যেত)—কাউসারের ধারাবাহিকতা
তিনি বলেন, আজ সারা বিশ্বে ৭০ মিলিয়নেরও বেশি সাদাত আছেন— যারা আল্লাহপ্রদত্ত “কাউসার” হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর বংশধর।
এই বরকতময় বংশ থেকে বহু চিন্তাবিদ, সংস্কারক ও নেতা জন্ম নিয়েছেন— ইমাম খোমেনি (রহ.) থেকে বর্তমান সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী পর্যন্ত— যারা বিশ্বে ন্যায় ও আধ্যাত্মিকতার সুর ছড়িয়ে দিয়েছেন।
শেষ কথা
তিনি বলেন— বরকত হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা হিসাব-নিকাশের নিয়মে ধরা যায় না, বরং মেলে খাঁটি ঈমান, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মাধ্যমে।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) সেই বরকতের সর্বোচ্চ প্রকাশ— যিনি তাঁর ত্যাগ, ঈমান ও সাহস দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার পথ আলোকিত করে গেছেন।
আপনার কমেন্ট